মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার সড়ক পার্কিং জোনে পরিণত হয়েছে। ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে সড়কে অবৈধ পার্কিং ও দোকানপাট বসানো হচ্ছে। চাঁদা দিয়ে চালকরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবৈধ পার্কিং করছে এবং অবৈধ দোকানপাট বসানো হচ্ছে। এতে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। পথচারী ও স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার কয়েকটি মার্কেটের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কে প্রতিদিন এমন চিত্র চোখে পড়ে। সড়ক দুটিতে বিভিন্ন ধরনের যাত্রীবাহী যানবাহনের নৈরাজ্য দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোনাপাড়া, ফার্মের মোড় ও ডগাইর বাজার এলাকাতেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ডেমরা-রামপুরা সড়কের দুপাশে স্থাপন করা অবৈধ স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাটগুলো বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এসব দখলযজ্ঞ পথচারী ও পরিবহণ যাত্রীদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের কথা থাকলেও তার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডগাইর বাজার এলাকাতেও সড়কের দুপাশ, বামৈল এলাকা, বাঁশেরপুল এলাকা, কোনাপাড়া বাজার এবং ফার্মের মোড়সহ অভ্যন্তরীণ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর সড়কের দুপাশে অবৈধ হাজারও দোকানপাট বসানো হয়েছে। একইসঙ্গে কোনাপাড়া সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে দোকান বসিয়ে কতিপয় অসাধু সিন্ডিকেট চাঁদা তুলছে। স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার গ্যারেজগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকতেও যানবাহনগুলো ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কের
দুপাশে পার্কিং করা হচ্ছে। সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাহ চ্ছে। প্রতিদিন সড়কে অছিম, রাজধানী, আলিফ, রমজান, স্বাধীন, আসমানি, রানীমহল ও আশিয়ানসহ বেশ কয়েকটি পরিবহণের পৌনে ৩০০টি যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করা হয়। এছাড়া দুই শতাধিক অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী লেগুনা পার্কিং করা হয়। এতে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিটি বাস, সিএনজি ও লেগুনা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করছে স্থানীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। সরকার দলীয় লোক হিসাবে তারা নিজেদের পরিচয় দেয়। দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের পক্ষে তারা কাজ করে বলে জানা গেছে। চাঁদা দিয়ে চালকরা সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে। এতে নানা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেইল্লা এলাকায় অছিম ও রাজধানী পরিবহণের ভাড়া করা পার্কিং গ্যারেজ থাকলেও সব বাসের সঙ্গে সেগুলোও সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়। সড়ক ও সুলতানা কামাল সেতুর নিচে চাঁদা দিয়েই পার্কিং করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়ক দুটিতে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি, লেগুনাসহ অন্যসব যানবাহন পার্কিং করছে এবং যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো হচ্ছে। এতে যানজট, দুর্ঘটনা ও নানা প্রতিবন্ধকতাসহ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পরিবহণ যাত্রীদের। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে শিশু-বয়স্করাসহ সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে রয়েছে।
এ বিষয়ে হাজি হোসেন প্লাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন বলেন, শুধু বাসের অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে মার্কেটে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে। পরিবহণ নৈরাজ্যের কারণে মার্কেটে ক্রেতারা আসতে চায় না।
অফিসগামী নারী ফারিহা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিদিন সদরঘাটের একটি ব্যাংকে যাই। আমাকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। স্টাফ কোয়ার্টারে বিভিন্ন বাস ও অন্য যানবাহন অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। এতে সড়ক পার হতে গেলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৮ ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদুল হাসান ও কাউন্সিলর সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করতে না পারলে বিড়ম্বনা আরও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথকে এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক থেকে অবৈধ পার্কিং সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে ডেমরা-রামপুরা সড়কের দু’পাশের দোকানপাট দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। সড়কে কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবহণ সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিগগিরই মতবিনিময় করব। এ বিষয়ে ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রল) ওহিদুজ্জামান জানান, এমন জায়গায় দোকানপাট স্থাপন করা যাবে না যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে, বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হবে।